ঢাকা: ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আ. ফ. ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের অনেক ধারা সরাসরি ইসলামি শরীয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি অভিযোগ করেন, তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান আলেম সমাজের আপত্তি উপেক্ষা করে অনেকটা গায়ের জোরে এই আইন পাস করেন।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে বাংলাদেশ মসজিদ মিশন আয়োজিত ‘মুসলিম পারিবারিক আইন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার ও ইমাম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আইনের সঙ্গে শরিয়তের সংঘাত

ধর্ম উপদেষ্টা ড. খালিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ এবং এদেশের মানুষ ঈমান ও দীনের ব্যাপারে আপোসহীন। কুরআন ও সুন্নাহর কথা বললে তারা দ্বিধাহীনভাবেই তা গ্রহণ করেন। তবে পাকিস্তানি শাসনামলে চাপিয়ে দেওয়া এই আইনের কিছু কিছু বিষয় ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে বিশেষজ্ঞ আলেমগণের সমন্বয়ে এর দ্রুত সমাধান করবে।

তিনি 'হিল্লা বিয়ে'র মতো বিষয়কে শরিয়তে হারাম উল্লেখ করে বলেন, তালাকের যথেচ্ছ ব্যবহারের পর যখন অনেকে তালাক দেওয়া স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চান, তখন এক শ্রেণির মানুষ শরিয়তের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের 'হিল্লা বিয়ে' দেওয়ার পাঁয়তারা চালান। এটিকে তিনি নারীর প্রতি অবমাননাকর এবং ইসলামের ওপর আঘাত বলে উল্লেখ করেন।

শাস্তি আরোপ ও শরিয়াহ আইন প্রচলন

দণ্ডবিধি আরোপের বিষয়ে ড. খালিদ হোসেন সবাইকে সতর্ক হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ইসলামি শরিয়তে দণ্ড আরোপের ক্ষমতা কোনো আলেম বা মুফতির নেই। তারা কেবল ফতোয়া দেবেন এবং কোরআন-হাদিসের বর্ণনা তুলে ধরবেন। বিচার করবে আদালত এবং রায় কার্যকর করবে প্রশাসন।

শরিয়াহ আইন প্রচলনের দাবির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এই দাবি দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে করা হচ্ছে। তবে তিনি মনে করেন, যতদিন পর্যন্ত সংসদের অধিকাংশ আসন শরিয়ত মেনে চলে এরূপ মানুষ দ্বারা পূর্ণ না হবে, ততদিন দাবি জানিয়ে কোনো লাভ হবে না। তিনি এজন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রজেক্টের দিকে এগোতে এবং ঐক্য ধরে রাখতে আহ্বান জানান।

সেমিনার ও বক্তাদের বক্তব্য

বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং জেনারেল সেক্রেটারি ড. মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানীর পরিচালনায় এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে ‘মুসলিম পারিবারিক আইন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. এ বি এম মাহবুবুল ইসলাম।

প্রধান আলোচক হিসেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ বলেন, বিদ্যমান আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে অনেক মুসলিম চাইলেও কিছু বিষয়ে ধর্মীয় বিধান পালন করতে পারছেন না। তিনি জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী ন্যায় ও ইনসাফের বাংলাদেশে এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানান।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শামছুল আলম, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আঃ ছালাম খান।

সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী যাবতীয় আইন সংস্কার করে এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান এবং এ বিষয়ে আলেম সমাজ ও ইমামগণকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

photo_2025-11-25_14-20-49

মসজিদ মিশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি ড. মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানীর পরিচালনায় সেমিনার ও ইমাম সম্মেলনে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ, বিশেষ অথিতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ শামছুল আলম, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আঃ ছালাম খান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, প্রফেসর ড. এবিএম মাহবুবুল ইসলাম। আন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসলামী ব্যাংক শরিয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি সাঈদ আহমদ মুজাদ্দেদী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. নিজাম উদ্দিন, তা’লিমুল কুরআন ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম, ইসলামিক কানুন বাস্তবায়ন পরিষদের আমীর মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, ব্রিটিশ একাডেমিশিয়ান ও ব্রিটিশ কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ, বাইতুস শরফ দরবার শরিফের ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ (শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার), প্রফেসর ড. ওয়ালী উল্লাহ, প্রফেসর ড. আ.ন.ম রফিকুর রহমান মাদানী, অধ্যক্ষ আ.খ.ম আবু বকর সিদ্দিক, মুফতি রেজাউল করিম আবরার, মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী ও অধ্যক্ষ মাওলানা মোশাররফ হোসেন।

khalid-gob